মূল পাতা মুসলিম বিশ্ব ১৫ নভেম্বর মহাসম্মেলন সফল করতে সম্মিলিত খতমে নবুওয়ত পরিষদের সংবাদ সম্মেলন
রহমত নিউজ 05 November, 2025 01:27 PM
১৫ নভেম্বর আন্তর্জাতিক খতমে নবুওয়ত মহাসম্মেলনের পূর্ব প্রস্তুতি, কার্যক্রম ও সার্বিক অবস্থা গণমাধ্যমের মাধ্যমে দেশবাসীর সামনে তুলে ধরার লক্ষ্যে খতমে নবুওয়ত পরিষদের সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ বুধবার (৫ নভেম্বর) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্য পেশ করেন সম্মিলিত খতমে নবুওয়ত পরিষদের আহ্বায়ক ও খতমে নবুওয়ত সংরক্ষণ কমিটি বাংলাদেশের আমীর মধুপুর পীর মাওলানা আব্দুল হামিদ ও আন্তর্জাতিক তাহাফফুজে খতমে নবুওয়ত বাংলাদেশের নায়েবে আমীর মাওলানা মাহফুজুল হক।
তারা বলেন, কুরআন হাদীসের এমন শতাধিক অকাট্য প্রমাণের ভিত্তিতে মুসলিম উম্মাহর সকলেই এ বিষয়ে ঐক্যমত পোষন করেছেন যে- হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামই শেষ নবী ও রাসূল। তাঁরপর যে কেউ নবুওয়তের দাবি করবে, সে মিথ্যুক ও প্রতারক। কিন্তু দুঃখজনকবিষয় হলো এই সুস্পষ্ট অকাট্য আকীদার বিপরীতে আহমদিয়া বা কাদিয়ানী সম্প্রদায় মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানিকে নবী বিশ্বাস করে এবং তার উদ্ভাবিত কুফরি মতবাদকে ইসলাম বলে প্রচার করছে, যা ইসলাম ও খতমে নবুওয়তের পরিপন্থী এবং সুস্পষ্ট ভ্রান্ত বিশ্বাস।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, কাদিয়ানি মতবাদের সূচনালগ্ন থেকেই ওলামায়ে কেরাম ও মুসলিম উম্মাহ একে ইসলামের মৌলিক আকীদার পরিপন্থী ঘোষণা করেছেন। আন্তর্জাতিক, জাতীয় বিভিন্ন ইসলামি সংগঠন ও আদালতও আনুষ্ঠানিকভাবে কাদিয়ানিদের অমুসলিম হিসেবে ঘোষণা করেছে।
১। রাবেতা আলমে ইসলামী (মুসলিম ওয়ার্ল্ড লিগ):
১৯৭৪ সালে মক্কায় অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ১৪৪টি ইসলামি সংগঠনের প্রতিনিধিরা সর্বসম্মতভাবে ঘোষণা করেন- কাদিয়ানি বা আহমদিয়া মতবাদ ইসলামের গণ্ডির বাইরে; তাদের অনুসারীরা ধর্মত্যাগী। এই বিভ্রান্ত মতবাদের প্রতিরোধ করা বিশ্ব মুসলিম সমাজের দায়িত্ব।
২। ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি):
১৯৮৫ সালে জেদ্দায় অনুষ্ঠিত ওআইসি ফিকহ একাডেমির অধিবেশনে সিদ্ধান্ত হয়- মির্যা গোলাম আহমদের নবুওয়ত দাবি ইসলামের দৃষ্টিতে স্পষ্ট কুফর। তাই কাদিয়ানিরা মুরতাদ ও অমুসলিম।
৩। ওআইসি বাগদাদ সম্মেলন (১৯৮৯):
এ সম্মেলনে সর্বসম্মতিক্রমে কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণা করা হয়। বাংলাদেশের পক্ষে তৎকালীন ধর্মমন্ত্রী এম. নাজিম উদ্দিন আল আজাদ এই ঘোষণায় স্বাক্ষর করেন।
৪। ভাওয়ালপুর হাইকোর্টের রায় (১৯৩৫):
বৃটিশ ভারতের ভাওয়ালপুর আদালত দীর্ঘ দশ বছর শুনানির পর রায় দেয়- কাদিয়ানিরা ইসলাম থেকে বিচ্যুত ও কাফের।
৫। পাকিস্তানের বিভিন্ন আদালতের রায়:
১৯৮১ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত লাহোর, কোয়েটা ও সুপ্রিম কোর্টসহ একাধিক আদালত কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণা দেয়।
৬। বাংলাদেশ হাইকোর্টের রায় (১৯৮৬ ও ১৯৯৩):
বাংলাদেশের হাইকোর্ট দুই দফায় কাদিয়ানিদের অমুসলিম হিসেবে উল্লেখ করে এবং শেষনবীর পরে নবুওয়ত দাবিকে কুফরি মতবাদ বলে রায় প্রদান করে।
৭। পাকিস্তান জাতীয় সংসদের রায় (১৯৭৪):
বত্রিশ দিনব্যাপী শুনানির পর পাকিস্তানের জাতীয় সংসদ সর্বসম্মতিক্রমে কাদিয়ানিদের সংখ্যালঘু অমুসলিম ঘোষণা করে। ১৯৮৪ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াউল হক আইন করে তাদের ইসলামি পরিভাষা ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ। এ দেশের নব্বই শতাংশ মানুষ বিশ্বাস করে- মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানিকে নবী মানা ইসলাম বিরোধী; তাই কাদিয়ানিরা মুসলমান হওয়ার প্রশ্নই আসে না, বরং তারা অমুসলিম কাফের । কিন্তু আজও রাষ্ট্রীয়ভাবে তাদেরকে সংখ্যালঘু অমুসলিম ঘোষণা করা হয়নি। এর ফলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট, আইনশৃঙ্খলার অবনতিসহ নানাবিধ সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে।
১। কাদিয়ানিরা মুসলমান পরিচয়ে নিজেদের মতবাদ প্রচার করে সাধারণ মানুষকে ঈমান থেকে বিচ্যুত করছে।
২। তারা নিজেদের উপাসনালয়কে "মসজিদ" নামে চালিয়ে দিয়ে মুসলমানদের বিভ্রান্ত করছে।
৩. অনেক স্থানে কাদিয়ানি অনুসারীরা মুসলিম মসজিদের ইমাম সেজে মুসলমানদের ঈমান-আমল নষ্ট করছে।
৪। তাদের বইপত্র ইসলামী গ্রন্থ হিসেবে প্রচার করে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।
৫। প্রকৃত পরিচয় গোপন করে মুসলমানদের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে পারিবারিক ও ধর্মীয় সংকট সৃষ্টি করছে।
৬। মুসলিম পরিচয়ে হজ ও চাকরির মাধ্যমে সৌদি আরবে প্রবেশ করে পবিত্র স্থানের মর্যাদা ক্ষুন্ন করছে।
৭। কাদিয়ানিরা নিজেদেরকে মুসলিম পরিচয় দিয়ে তাদের মনগড়া বিশ্বাস ও কার্যক্রমকে প্রকৃত ইসলাম বলে আখ্যা দেওয়ার মাধ্যমে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে চরমভাবে আঘাত হানছে। যার ফলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি মারাত্মকভাবে বিনষ্ট হচ্ছে।
অতএব, এসকল সমস্যার একমাত্র সমাধান–কাদিয়ানিদের স্বতন্ত্র পরিচয়ে সংখ্যালঘু অমুসলিম হিসেবে ঘোষণা করা। এতে মুসলমানদের ধর্ম যেমন সুরক্ষিত থাকবে, কাদিয়ানিরাও নিরাপদে নিজ ধর্ম পালন করতে পারবে এবং দেশের আইনশৃঙ্খলা ও সাম্প্রাদায়িক সম্প্রীতিও অটুট থাকবে।
লিখিত বক্তব্যে দাবি জানানো হয়, কাদিয়ানীদের রাষ্ট্রীয়ভাবে সংখ্যালঘু অমুসলিম ঘোষণা করতে হবে, তাদের ইসলামি পরিভাষা ব্যবহারে আইনগত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে, সংবিধানে আকীদায়ে খতমে নবুয়তের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে, ধর্মীয় শিক্ষা ও প্রচারে বিভ্রান্তি রোধে জাতীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, মাওলানা আবদুর রব ইউসুফী, মাওলানা মামুনুল হক, মাওলানা বাহা উদ্দীন যাকারিয়া, মাওলানা মহিউদ্দিন রব্বানী, মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজী, মাওলানা রশীদ আহমাদ, মুফতী শুয়াইব ইব্রাহিম,মুফতী মোহাম্মদ আলী আফতাব নগর, মুফতী সাখাওয়াত হোসাইন রাজী, মাওলানা কেফায়েত উল্লাহ আজহারী, মাওলানা নুর হোসাইন নুরানী,মাওলানা উবায়দুল্লাহ কাসেমী,মুফতি আরিফ বিল্লাহ কাসেমী,মাওলানা আব্দুল মজিদ,মাওলানা আবুল কাশেম আশরাফী, মুফতি শফিক সাদী, মুফতি ইমরানুল বারী সিরাজী, মাওলানা রাশেদ বিন নূর, মাওলানা আব্দুল গাফফার, মাওলানা আবু ইউসুফ প্রমুখ।